যে দশ’টি কোর্ট রুম-ট্রায়াল সিনেমা দেখা উচিৎ

শিপ্ত বড়ুয়া

বিশ্বে কোর্ট রুম বা ট্রায়াল নিয়ে শত শত সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। অনেক সিনেমা দেখার পরে ভাবনার জগতে কেবল পরিচালক আর স্ক্রিপ্ট রাইটারদের মননশীলতার চিত্র ভাসে, কতটুকু মেধাবী হলে এতো ভালো ভালো সিনেমা বানাতে পারেন তারা। বাংলায় বলতে গেলে আদালত পাড়ার সিনেমা।

আদালতের গল্প, সাধারণ মানুষের অগোচরে থাকা কষ্টের গল্প। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার কোর্ট সিস্টেম হলো এডভার্সারিয়াল কোর্ট সিস্টেম মানে কোর্ট অন্ধ, আইনজীবীরা সাক্ষ্য-প্রমাণে যা কোর্টের সামনে উপস্থাপন করবেন তার উপর ভিত্তি করে কোর্ট রায় দিবেন। এই ব্যবস্থার কারণে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে বিশাল একটা অংশের মধ্যে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হতে থাকে এবং সাধারণ মানুষ নানান ভোগান্তির তোপে পড়েন।

এসব বাস্তব আদালত পাড়ার ঘটনা এবং আইন নিয়ে বিশ্বে তৈরি হয়েছে অসাধারণ সব সিনেমা যা আমাদের বর্তমান সমাজের কথা বলে সুতরাং তা আমাদের দেখা উচিৎ। কোর্ট রুম ট্রায়াল সিনেমা বা আদালত পাড়ার সিনেমার প্রতি আমরা যারা সিনেমাপ্রেমী আছি তাদের আলাদা একটা টান কাজ করে।

তারমধ্যে সিনেমাপ্রেমীদের জন্য আমার দেখা দশ’টি অসাধারণ কোর্ট রুম বেইজড ট্রায়াল সিনেমা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা উচিৎ বলে মনে হলো যদি তাতে করে আপনারা মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে সিনেমাগুলো দেখতে বসতে পারেন। যারা আইনের ছাত্র কিংবা আইন পেশায় নিয়োজিত তারা এই সিনেমাগুলোর নির্মাণশৈলী কতো ভালো তা সহজেই আন্দাজ করতে পারবেন, আর সাধারণ দর্শকবৃন্দও সিনেমাগুলো ভালোভাবে দেখলে তাদের সামনে সহজেই সমাজের আদালত পাড়ার চিত্র উপস্থাপিত হবে। সুতরাং আলোচনা করা যাক।

১. টুয়ালভ এংরি ম্যান ( 12 Angry Men )

একটি আবদ্ধ ঘরে এক ঘন্টা পয়ঁতাল্লিশ মিনিটের পূর্ণদৈর্ঘ সিনেমা কখনো দেখেছেন? আপনার উত্তর নিশ্চয় না। একটা সিনেমা তৈরি করতে পরিচালকগণ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় শুটিং পরিচালনা করেন এবং বেশিরভাগ সিনেমায় আমরা তা দেখে থাকি। কিন্তু পরিচালক সিডনি লুমেট ১৯৫৭ সালে একটি রুমের ভেতরেই দীর্ঘ আইনি সংলাপ নিয়ে লিগ্যাল ড্রামা টুয়ালভ এংরি ম্যান পরিচালনা করেছিলেন।

বর্তমানে আই এম ডি বি রেটিং এ আট দশমিক নয় নিয়ে ১৯৫৭ সালের টুয়ালভ এংরি ম্যান এখনো গৌরবের সাথে চলছে। মূলত একটি খুনের মামলা পরিচালনা করেন জুরিগণ, মানে বিচারকদের একটি বেঞ্চ, তারমধ্যে যে রায় ঘোষণা করা হয় সে রায়ের বিরুদ্ধে একজন জুরি মতবিরোধ করে অন্যান্য জুরিদের সাথে।

জুরিরা রায় ঘোষণার পরে একটি কক্ষে সবাই অবস্থান নিলে আলোচনার খাতিরে  মতবিরোধকারী জুরি অন্যান্য জুরিদের বোঝাতে চেষ্টা করেন যে আমরা আদালতে খুনের মামলাটি যেমন দেখেছি মামলাটি ততটা স্পষ্ট নয়। এই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ এবং অসাধারণ সংলাপ নিয়েই মূলত এক ঘন্টা পয়ঁতাল্লিশ মিনিটের এই সিনেমা। সে সময়ে এরকম সিনেমা তৈরি আমার কাছে অবাক লাগে। অবশ্যই দেখার তালিকায় আপনাকে এই সিনেমার নাম প্রথমে রাখতে হবে।

২. অঙকুর আরোরা মার্ডার কেস ( Ankur Arora Murder Case )

ভারতে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ঘটা নিত্যদিনের ঘটনাগুলো গণমানুষের সামনে এনেছে ২০১৩ সালের তৈরি অঙকুর আরোরা মার্ডার কেস সিনেমাটি। মূলত এই সিনেমাতে দেখানো হয়েছে নিয়মিত প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে দিনের পর দিন কিভাবে ডাক্তাররা রোগীদের অমূল্যবান জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন শুধুমাত্র টাকার জন্য, চিকিৎসা সেবাকে কিভাকে উন্নত ব্যবসায় রূপান্তর করা হয়েছে।

অঙকুর আরোরা যার অপারেশনে হাসপাতালের প্রধান সার্জনের অবহেলাকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কোর্ট এবং কোর্ট রুমে পাওলি দামের সত্যিকারের আইনের ধারা নিয়ে অসাধারণ ব্যাখ্যাসহ অভিনয়শৈলী আপনাকে কোর্ট ট্রায়াল দেখার বাস্তকিকতার ভার্চুয়াল আনন্দ দিতে পারে। মেডিকেল প্র্যাকটিশনারদের নিয়মিত অবহেলা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া কেমন হতে পারে তা নিয়ে তৈরি এই সিনেমাটি প্রথম। আপনার সিনেমা দেখার তালিকায় এই সিনেমাটিকে দ্বিতীয় স্থানে  রাখতে পারেন।

৩. নো ওয়ান কিলড জেসিকা ( No One Killed Jesicca )

২০১১ সালে ভারতে তৈরি থ্রিলার কোর্ট বেইজড সিনেমা নো ওয়ান কিলড জেসিকা। আমার মনে হয় সিনেমার প্রথম দিকের দমবন্ধকর কাহিনীর সাথে এই সিনেমার নামকরণ অনেকটা প্রাসঙ্গিক। কারণ সিনেমার মূল পর্বে মানে কোর্ট ট্রায়ালে সাক্ষীরা ভয়ে সব উলট-পালট সাক্ষ্য দিতে থাকে যার কারণে কোর্ট মন্তব্য করে যে, তাহলে কি জেসিকা’কে কেউ খুন করেনি?

এই সিনেমার মূল কাহিনী হলো একজন ক্ষমতাবান রাজনীতিকের ছেলে মদ খেতে গিয়ে মদ দিতে অস্বীকার করায় মাতাল অবস্থায় জেসিকাকে গুলি করে এবং হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জেসিকা মারা যায়। জেসিকার বোন মামলা করলেও ক্ষমতার জোরে খুনের সকল প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করে খুনীর পরিবার। পরে এক অপরাধ তদন্তকারী সাংবাদিকের গণমত তৈরির ভিত্তিতে এবং রাষ্ট্রীয় চাপে দেশবাসী জেসিকার খুনের শাস্তির জন্য ফুলে ফেঁপে উঠে।

সুতরাং একটি মামলায় সাংবাদিকদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে তা হয়তো দেখানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এই সিনেমাতেও আপনারা দেখতে পাবেন অসাধারণ কোর্ট রুম ট্রায়াল এর বাস্তবিক স্পর্শ। অনেকগুলো পদক জিতেছে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে সিনেমাটি।

৪. ধণন্জয় ( Dhananjay )

এই সিনেমা ‍সম্পর্কে প্রথমে যে মন্তব্যটি করতে চাই সেটি হলো সিনেমাটি দেখার পরে আইন পেশা বা স্মার্ট ল’য়ারিং কি সে সম্পর্কে আপনি একটা স্পষ্ট ধারণা পাবেন। যদিও সিনেমাটিতে কোর্ট রুমের সিনগুলোতে আইনের ধারার ব্যাখ্যার সাথে বাস্তবিক আইনের প্রসিডিউর এর কোন মিল নেই, তারপরেও একটি রায় হয়ে যাওয়া মামলা অন্যপথে পরিচালনা করা গেলে যে এই মামলার রায় তার সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো তা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে কোর্ট রুমে।

তারপরেও না বলা আমাদের চলমান বিচার ব্যবস্থার বেশিরভাগ খুনের এবং ধর্ষণের মামলায় নিরপরাধদের কিভাবে ফাঁসি হয়ে যায় সে সম্পর্কে একটা ধারণ পাওয়া যাবে এই সিনেমায়। সিনেমাটি হাজারো বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি এ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। একজন দিনমজুর, খেটে খাওয়া লোক কিভাবে একটি ধর্ষণ এবং খুনের আসামী হয়ে ফাঁসিতে ঝুলে গেলো সে নিয়ে পরবর্তীতে কোর্ট রুমে তা অনুমান নির্ভরতার সাথে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই সিনেমায়।

যদিও বাস্তবিক আইনের সাথে অনেক প্রসিডিউর এখানে না মেনে এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট ডেভেলাপ করা হয়েছে তা আগেই বলেছি। একটি নির্দিষ্ট মুডে থাকা যায়, সিনেমাটি দেখার সময় আপনার অনুমানের সাথে কোন কিছুই মিলবে না দৃশ্যগুলো, এটাই এই সিনেমার মূল টুইস্ট বলে মনে হয় আমার।

৫. জলি এল এল. বি [ পর্ব ১,২] ( Jolly LL.B – part 1, 2)

সম্ভবত আপনাদের সকলের দেখা এই সিনেমাটি, অনেক আগের বহুল প্রচারিত একটি সিনেমা। এটার জেনার হিসেবে কমেডি এবং কোর্ট রুম ড্রামা নির্দেশ করা হয়। যদিও পার্ট ওয়ান এবং পার্ট টু দুইভাগে করা হয়েছে এই সিনেমা। তারা হয়তো এটাকে সিরিজের মতো করে কন্টিনিউ করতে চেয়েছে। ২০১৩ সালে জলি এল এল বি পর্ব এক এবং পরে ২০১৭ সালে তৈরি করা হয় এল এল বি টু।

আমার কাছে দ্বিতীয়টা অনেকটা গোছানো মনে হয়েছে। মূলত আমাদের বর্তমান সমাজের কোর্ট রুম সিস্টেমটাকে এই সিনেমায় তুলে আনা হয়েছে। আইনজীবীদের অতিরিক্ত ফিস নেওয়া এবং টাকা নেওয়ার পরেও পর্যাপ্ত আইনি সেবা না দেওয়াকে চিত্রায়িত করেছে পরিচালক। যারা দেখেননি এই সিনেমাটি দেখে নিতে পারেন মুহুর্তেই, মোটেও বিরক্তিকর নয় সিনেমাটি। হাসির সাথে অনেকগুলো সমাজের চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

৬. মাল্ক ( Mulk )

ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে অসাধারণ একটি সিনেমা মাল্ক। এই সিনেমায় পরিচালক একটি বিষয়কে পরিষ্কারভাবে সামনে এনেছেন সেটি সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতীয়তাবাদ। পৃথিবীতে ধর্ম’কে ব্যবহার করে রাজনীতি চলছে এবং প্রয়োজনে ধর্মের অপব্যবহার করা হচ্ছে তার সুন্দর চিত্র দেখিয়েছেন এই সিনেমাতে।

ইসলাম এবং জঙ্গিবাদ কতোটা আলাদা এবং ইসলামে জিহাদ বলতে কি বুঝায় তা দেখানোর ভালো চেষ্টা করেছেন ডিরেক্টর, এই সিনেমার মধ্য দিয়ে উগ্র হিন্দু এবং ইসলাম অপব্যবহারকারীরা স্পষ্টভাবে তাদের প্রশ্নের জবাব পাবেন। ভারতে এরকম একটা সিনেমা মুক্তি দেওয়া মানে হিন্দুত্ববাদের চরম পরাজয় ঘটানো, সিনেমাটি ভারতে হিন্দু-মুসরমান অসাম্প্রদায়িক সম্পর্ক আরো জোরদার করবে বলে মনে হয়।

মূলত আইনের মূলস্রোতের ধারা মাফিক কোর্ট ট্রায়াল সিনেমা না হলেও কোর্ট রুম অভিনয়ের মাধ্যমে দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবোধের অসাধারণ চিত্রায়ন হয়েছে সিনেমাটিতে। ভারতে ২০১৭ সালের দিকে উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং বিশ্বের নানান প্রান্তে ইসলামে জিহাদের উদহরণের নামে বোমাবাজি করা হয় যার ফলে ভারতের মুসলমানদের জন্য বসবাস অনেকখানি অনিরাপদ হয়ে পড়ে, ঠিক তখনি ২০১৮ সালে মুক্তি লাভ করে এই সিনেমাটি। অসাম্প্রদায়িকতা, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ বুঝতে সিনেমাটি ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়।

৭. পিংক ( Pink )

সত্যিকারের কোর্টরুম ট্রায়াল ড্রামা দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পিংক দেখতে হবে। কথিত যে ২০১৬ সালের সত্যি ঘটনা অবলম্বনে এই সিনেমার সূত্রপাত ঘটে। অহরহ এরকম একই ঘটনা ভারতের নিয়মিত নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছিলো বলা যায়। মূলত একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধ অন্য অপরাধ হিসেবে সম্পূর্ণ বিপরীত এঙ্গেলে মোড় নিতে পারে তা এই সিনেমা না দেখলে বুঝবেন না।

বন্ধু-বান্ধবীদের মধ্যেই মূলত মামলার বাদী-বিবাদী হয়ে যায় এই সিনেমাতে। বান্ধবীকে ধর্ষণের চেষ্টা মানে এটেম্পট টু র‌্যাপ কিভাবে উল্টা বন্ধু মানে প্রতিপক্ষের করা এটেম্পট টু মার্ডারের মামলা হয়ে যায় তার সুন্দর ইতি টেনেছেন পরিচালক। তাছাড়া সব’চে যে জিনিষটি আপনার ভালো লাগবে সেটি হলো কোর্ট রুমে ল’ইয়ারদের এক্সামাইন,  ক্রস-এক্সামাইন আর তিনজন বন্ধু-বান্ধবীদের  আসামী ও সাক্ষ্য হিসেবে অভিনয়।

সবমিলিয়ে এই সিনেমায় ভারতীয় কোর্ট প্রসিডিউর এবং আইনের আলোকে কোর্ট রুম ট্রায়ালের একটা অসাধারণ ফিল পাবেন বলে আমার মনে হয়। এই সিনেমাটি অবশ্য বেশির ভাগ সিনেমাপ্রেমী অনেক আগেই দেখেছেন।

৮. স্যাকশান ৩৭৫ ( ‍Section 375 )

সেকশান ৩৭৫ মনিশ গুপ্তের লেখা স্ক্রিপ্টে তৈরি সিনেমা। ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৭৫ ধারা হচ্ছে নারী ধর্ষণের অপরাধ সম্পর্কিত। সম্প্রতি ২০১৯ সালে শুভ মুক্তি পায় এই সিনেমাটি। আইনের ছাত্রদের জন্য এই সিনেমা অনেকটা শিক্ষামূলক ও প্রেরণাদায়ক বলে মনে হয় আমার। শুরুর একটি সেমিনারে মূল আইনজীবীর বক্তব্য এরকম, “নেভার ফল ইন লাভ ওয়িথ দ্যা ল, ইট ইজ আ জেলাজ মিসট্রেস, ইট উয়িল ডিজাপয়েন্টেড ইউ”।

এই সিনেমায় মূল যে বিষয়টি হাইলাইট করা হয়েছে তা হচ্ছে নিয়মিত আমাদের লোকমুখে শোনা ডিরেক্টর আর এক্টরের শারীরিক সম্পর্ক কেনো হয় সচরাচর আর আমরা কখন সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সকে ধর্ষণ বা র‌্যাপ বলতে পারি কিনা। অসাধারণভাবে এই সিনেমায় ধর্ষণের সংঙ্গা দেওয়া হয়েছে, সমাজে এই ৩৭৫ ধারার অপব্যবহার দেখানো হয়েছে। এই সিনেমা দেখে আমার যেটা ভালো লেগেছে বাস্তবিক সমাজের চিত্র সুস্পষ্টরূপে সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক। কোর্ট রুম ট্রায়াল এই সিনেমার বিশেষ চিত্র। বিচারকার্যের শেষ অংশটুকুই দর্শকদের জন্য অসাধারণ সব সংলাপ লিখেছেন স্ক্রিপ্ট রাইটার। ডিফেন্স ল’ইয়ারের শেষ আর্গুমেন্ট থাকে “কনসেনসুয়াল সেক্স ইজ নট র‌্যাপ এন্ড ইট ওয়াজ পার্টিসিপেশনাল লাভলি সেক্স” ইউর অনার।

তারপরেও অবাক করা বিষয় এই সিনেমায় রায় ভিক্টিম এর পক্ষে যায়, একিউজড ডিরেক্টর অফেন্ডার হিসেবে জেলে যায়। শেষ অংশে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে প্রসিকিউশন ল’য়ার ডিফেন্স ল’য়ারের সাথে দেখা হলে একটা কনভার্সেশন দেয় স্ক্রিপ্ট রাইটার যা আইনজীবীদের প্রফেশনাল এথিক্স হিসেবে খুবই কার্যকর সেটা এরকম প্রসিকিউশন লয়ার ডিফেন্স লইয়ারের জুনিয়র হওয়ায় আপসোসের সাথে বলে “স্যার আই ডোন্ট থিংক জাস্টিস ওয়াজ ডান” প্রতিউত্তরে শিক্ষাগুরু আইনজীবী বলেন, সো হুয়াট “ল ইজ আওয়া বিজনেস, জাস্টিস ইজ নট”। সবমিলিয়ে আমার কাছে অসাধারণ একটা কোর্ট রুম ট্রায়াল সিনেমা সেকশান ৩৭৫।

৯. চাপাক ( Chapak )

এসিড অপরাধ নিয়ে ২০২০ সালে তৈরি হাফ কোর্ট রুম ট্রায়াল সিনেমা চাপাক। যদিও আই এম ডি বি রেটিং এ এই সিনেমাটি এখনো ফাইভ রেটিং আউট অব টেন। তারপরেও আই এম ডি বি রেটিং নিয়ে এই সিনেমাকে মাপা যাবে না বলে আমি মনে করি কারণ এই ধাচের সিনেমা এর আগে তেমন একটা হয়নি। ভারতে অসংখ্য জগণ্য অপরাধের ভেতর অন্যতম একটি অপরাধ এসিড নিক্ষেপ।

এই সিনেমার তথ্যমতে ২০১৭ সালে ভারতে এসিড নিক্ষেপের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ২৫২ টি এবং খুব সহজেই এসিড নিক্ষেপকারীরা মুদির দোকান থেকে কিনতে পারেতো এসিড। একটি এসিড নিক্ষেপকে কেন্দ্র করে এর বিচার চাওয়া, কোর্টের দীর্ঘসূত্রিতা এবং আইনে এর শাস্তি যে অত্যাধিক কম এই সিনেমার বিষয়গুলো হাইলাইট করা হয়েছে।

শেষমেষ আরেকটি বিষয় খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক হচ্ছে, এসিড শিকারকারী নারীদের নিয়ে একটি সংগঠন চালান এক ভদ্রলোক যারা হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত করে এসিড নিষিদ্ধ এবং এসিড নিক্ষেপের শাস্তি বৃদ্ধি করার জন্য। সবমিলিয়ে আমার কাছে এসিড অপরাধ নিয়ে উল্লেখযোগ্য একটি সিনেমা মনে হয়েছে চাপাক।

১০. দ্যা জজ ( The Judge )

আমেরিকান কোর্ট রুম ট্রায়াল সিনেমা ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্যা জাজ খুব সাড়া ফেলেছে বিশ্বে। এই সিনেমার জেনার হিসেবে যদিও ক্রাইম কাউন্ট করা হয় আমার মতে এই সিনেমাটি স্পর্শকাতর একটি বাস্তব কাহিনী বা ফুল সাইড ড্রামা। সিনেমার মূল আইনজীবী হেনরি পালমার, নির্দোষ ক্লায়েন্টরা তার বিল পরিশোধ করতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি, জেনে শুনে দোষী ক্লায়েন্টদের পক্ষ নিয়ে থাকেন সবসময়।

একটি কেসের শুরুতে ফোনের মাধ্যমে মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে হেয়ারিং বিরতি দিয়ে তিনি ফিরে যান নিজ ঘরে। কিশোর থাকাকালীন বাবার সাথে ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর এই প্রথম বাড়ি ফিরে যাওয়া তার। সেখানে রয়েছে বড় ভাই, ছোট ভাই, স্কুল জীবনের বান্ধবী এবং ৪২ বছর ধরে সততা ও নিষ্ঠার সাথে বিচারকের দায়িত্ব পালন করা তার বাবা পালমার।

তিনি এখন জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কেসের মুখোমুখি হবেন ঘরে এসে। বাবা ছেলের বরফ শীতল সম্পর্ক কী কখনও স্বাভাবিক হবে কিনা, মূলত এইসব স্পর্শকাতর কাহিনী নিয়ে তৈরি সিনেমাটি আইনের ছাত্র এবং আইন পেশায় নিয়োজিতদের জন্য অনন্য এক গল্প বলে আমি মনে করি।

এরই মধ্যে শেষ করলাম দশটি অসাধারণ কোর্ট রুম ট্রায়াল সিনেমার সংক্ষিপ্ত রিভিউ ও আলোচনা। সিনেমা হলো বইয়ের অনুরূপ শক্তি যা কিনা সমাজের নানান বাস্তবতার কথা বলে, আমাদের চিন্তার পরিধি বাড়ায়। যা সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি না তা সিনেমায় পরিচালক বলে দেন। একটি ভালো সিনেমা আমাদের মনকে প্রশমিত করতে পারে এবং আমরা শিখতে পারি অজানা সব তথ্য।

উপরের সিনেমাগুলো ছাড়াও কোর্ট রুম ট্রায়াল নিয়ে বিশ্বে তৈরি হয়েছে শত শত সিনেমা যা দেখার মতো। আশা রাখি উপরের সিনেমাগুলো দেখার পরে আপনাদের অনুধাবন আমার চেয়েও আরো শক্তিশালী হবে। দশ’টি এই অসাধারণ সিনেমা না দেখে থাকলে আজকেই বসে যান সিনেমাগুলো দেখতে।  সিনেমাপ্রেমীদের জন্য ভালোবাসা রইলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *