বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করার কৌশল :: ডোপামিন ডিটক্স

ডোপামিন ডিটক্স

কান্তু শর্মা

আপনি কি কোন কাজ করতে গিয়ে বারবার অন্যমনা হয়ে পড়ছেন? ঠিকঠাক যে কাজ করতে বসেছেন সে কাজ করতে পারছেন না? কিংবা রাগ-হাসি বা কান্না কখন কেন আসছে কিছুই টের পাচ্ছেন না? তাহলে আজকে আপনার সাথে ঘটা এসব নানান বিষয়ের মূল কারণ কি সেসবের সন্ধান দিবো। মূলত এই লেখাটি একটি বই নিয়ে আলোচনা। আমার পড়া একটি বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া। আশা করি আপনাদের এসব নানান সমস্যা সম্পর্কে জানতে আজকের এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।

বইয়ের নাম: ডোপামিন ডিটক্স।
লেখক: থিবো মেরিস।
অনুবাদ: প্রিতম মুজতাহিদ।
ক্যাটাগরি: আত্ম উন্নয়ন।
পৃষ্টা: ৮০
প্রকাশক: রুশদা প্রকাশ।
দাম: ১৫০/= টাকা।

যেকোন ব্যক্তির একঘেয়ে কোনো কাজ পছন্দ নয়। শৈশবকালে যখন স্কুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লাস করতে ভালো লাগত না। ঘণ্টার বিরতিতে ক্ষণিক সময়ের জন্য অন্যকোণ স্টিমুলেশন জাতীয় কাজ করলে ভালো লাগত। শুধু শৈশবে স্কুলে ক্লাস করা নয়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এমন কিছু কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ একটু বেশি করি। অপরদিকে অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দিতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ কাজ করে না।

এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে এমনটি হওয়ার কোন কারণ আছে কি? এমনটি হওয়ার অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। আর তাহলো মস্তিষ্কে ডোপামিন বেশি ক্ষরণ হওয়া। ডোপামিন হচ্ছে কোন কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ক্ষরণ হওয়া একটি হরমোনের নাম।

যে হরমোন অতিরিক্ত ক্ষরণ হওয়ার কারণে কোন ইতিবাচক কাজ করার ক্ষমতা কমে আসে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা প্রযুক্তিগত সম্পর্কিত কোম্পানিগুলো মূলত মানুষের মস্তিষ্ক কিনে নেওয়ার কাজটুকু করছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ডোপামিনের নিউরোট্রান্সমিটারের ফল।

একটু সহজ উদাহরণ দিই, যেমন ধরুন আপনি কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন কিংবা করবেন বলে মন স্থির করে রেখেছেন। যখন আপনি কাজটি করতে বসলেন,তখন হঠাৎ আপনার ফোনে একটি এসএমএস আসলো কিংবা কাজের ফাঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে এসে একটু স্ক্রলিং কিংবা চ্যাট কা নোটিফিকেশন চেক করতে ইচ্ছে হলো। আর একটা পর্যায়ে এটাতে আসক্ত হয়েছেন কবে টেরই পেলেন না।

আপনি এমনভাবে ধীরে-সুস্থে আপনার অজান্তেই এসব নানান অভ্যাসে আসক্ত হয়ে গেছেন যেটি থেকে আপনি সহজেই বের হয়ে আসতে পারছেন না। আপনি পুরো নেটওয়ার্কের অ্যালগরিদমে আটকে পড়ে আছেন।

আপনি আসলেই মূল যে কাজটি করতে বসছিলেন ঐ কাজ শেষ করার কথা নিমিষেই ভুলে গেলেন, আর সে কাজ করা হলো না। এমনটি হওয়ার কারণ হলো ঐসব কাজে অতিরিক্ত ডোপামিন ক্ষরণ।

যে ক্ষরণের মাধ্যমে পুরস্কার হিসেবে সাময়িক আনন্দ ঠিকই পেয়েছেন। এই যে, সাময়িক আনন্দ অনুভব হওয়াতে আপনার দীর্ঘস্থায়ী কোন কাজ তেমন গুরুত্ব দিয়ে আসলে সম্পাদনা করা আর হয়ে উঠে না।

তবে লেখক ‘থিবো মেরিস’ এর  লেখা ‘ডোপামিন ডিটক্স’ বইয়ের মতে এই অভ্যাসের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। গবেষকরাও ডোপামিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য “ডোপামিন ডিটক্স” বলে একটি কার্যপদ্ধতির পরিচিতি ঘটান কিছু আগে। বইটির লেখক অতিরিক্ত ডোপামিন ক্ষরণ বন্ধ করে নির্দিষ্ট কাজে মনযোগী হওয়ার জন্য ডিটক্স করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ৩টি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। আর তা হল-

১. ৪৮ ঘণ্টার সম্পূর্ণ ডোপামিন ডিটক্স।
২. ২৪ ঘণ্টার ডোপামিন ডিটক্স।
৩. আংশিক ডোপামিন ডিটক্স।

লেখক উপরোক্ত ডিটক্স নেওয়াকালীন মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উদ্দোলিত হয় এমন কাজ থেকে নিজেকে বাঁধা প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজের প্রতি মনোযোগী হতে বলা হয়েছে। লেখকের মতে, এই বইটি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া লোকদের লক্ষ্যে ফেরানোর রাস্তা দেখিয়ে দেবে।

ডোপামিন ডিটক্সের আরো কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বইপোকাদের বইটি পড়তে হবে। আশাকরি, কারো বিক্ষিপ্ত মনকে প্রশিক্ষিত করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে “ডোপামিন ডিটক্স”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *