শিপ্ত বড়ুয়া
লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার রামু উপজেলার ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা। লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার নামকরণের আছে বর্ণিল ইতিহাস কক্সবাজার জেলার রামুতে রয়েছে শত বছরের পুরানো নানান স্থাপনা। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় একসময় রামু ছিল আরাকান আবাস।
রামু-কক্সবাজারসহ পুরো বৃহত্তর চট্টগ্রাম জুড়ে রাজত্ব ছিলো আরাকানিজদের। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজা বোদফ্রা বা বোদপায়া এই আরাকান শাসন করেছিল বলে জানা যায়।
তৎকালীন বেশিরভাগ রাজা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে রয়েছে নানান বৌদ্ধ ধর্মের স্থাপনা। বিশেষ করে রামুতে রয়েছে প্রাচীন অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার। লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার তেমনি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার।
রামু উপজেলার ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের অধীন অফিসের চর এলাকায় অবস্থিত লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার। রামু উপজেলা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই পাবেন লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার। একসময় এখানে রাখাইন বসতি থাকলেও বর্তমানে কোন রাখাইন বসতি এই মন্দিরের আশেপাশে নাই।
অফিসের চর এলাকায় গিয়ে যে কাউকে বললেই আপনাকে লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিবে। একটু লোকালয়ের মাঝখানেই রয়েছে এই বৌদ্ধ বিহারটির অবস্থান। নিরব-নিস্তব্দ প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই স্থাপনাটি।
লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বর্তমান অধ্যক্ষ জানায়, বিহারটি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন জমিদার থোয়াইঙ্গ্যা সওদাগর। তৎকালীন বার্মা থেকে কাঠ এবং অন্যান্য সরন্জাম এনে উক্ত বিহারটির নির্মাণ কাজ করা হয়।
লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে কাঠ দ্বারা নির্মিত কয়েকটি ভবন এবং একটু সামনে এগিয়ে গেলেই কাঠের ভবনের সামনে দেখা যায় একটি ঘন্টাঘর, পাশাপাশি কাঠের কারুকাজ করা আছে ভবনগুলোতে।
ঘন্টাঘরটিতে দুইটি বড় ঘন্টা আছে। কথিত আছে যে, ঘন্টার আওয়াজ তৎকালীন সময়ে ৫ মাইল দূর থেকেও শোনা যেত। এবং এক একটি ঘন্টার ওজন প্রায় ৮০ মণেরও বেশি।
রামুর বৌদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক ধনিরাম বড়ুয়া জানান, তিনি জানান, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারের ভবনগুলো সেগুন কাঠের তৈরি। আমি দীর্ঘদিন ধরে লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস খুঁজেছি।
অনেক পুরাতন ম্যাগজিন এবং সরাসরি সূত্র থেকে লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারের নানান ইতিহাস জেনেছি। জানা যায়, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারে ধ্যানী বৌদ্ধ মুর্তিটি বোন্জের তৈরি। বার্মা থেকে কারিগর এনে লামার পাড়া বৌদ্ধ মন্দিরে উক্ত বুদ্ধ মুর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল।
নিরিবিলি সবুজ পরিবেশে শতবর্ষী পুরানো লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার যেন এক মূর্ত প্রতীক। এখানে কেউ গিয়ে কিছুক্ষণ নিরবতার সাথে দাঁড়ালে একশো বছর পিছনের ইতিহাস ভাবতে বাধ্য।
প্রসঙ্গত লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারের আয়ুষ্কাল প্রায় একশো বছরের অধিক হলেও এখনো পর্যন্ত উক্ত বিহারের সকল কাঠ ও নির্মাণে ব্যবহৃত দ্রব্যাদির কোন পরিবর্তন হয়নি। শক্ত-পোক্ত আছে ভবনগুলো।
অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারে আসেন বৌদ্ধিক নিয়মে ধ্যন-সাধনা করতে। যদিও বর্তমানে উক্ত বিহারের বিহার অধ্যক্ষ বিহারে প্রবেশের অনেক সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছেন। অনুমতি সাপেক্ষে লামার পাড়া বিহার পরিদর্শন করা যায়।
রামু ভ্রমণে আসলে অবশ্যই লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারে একবার হলেও যাওয়া উচিৎ। রামু চৌমুহনী সদরে আছে থাকার ব্যবস্থা এবং খাওয়ার ভালো রেস্টুরেন্ট। দু একদিন হাতে সময় নিয়ে রামুতে দিনযাপন করতে পারলে জানা যাবে আরো নানান পুরাতন স্থাপনার কথা।