শিপ্ত বড়ুয়া
রামু রাাবার বাগান নিয়ে আজ কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। রামু রাবার বাগান বর্তমানে পর্যটকদের কাছে পরিচিত একটি নাম। কক্সবাজার জেলা পর্যটন নগরী হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে এক অনবদ্য নাম। বিশেষ করে বিশাল সমুদ্র পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। কক্সবাজার জেলার পাশাপাশি রামু উপজেলাও বর্তমানে হয়ে উঠেছে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাময় জায়গা।
রামু রাবার বাগানের অবস্থান
কক্সবাজার যেতে হলে অবশ্যই রামু রাবার বাগানের ভেতর দিয়েই যেতে হবে আপনাকে। চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে লাগোয়া ও গা-ঘেষা রামু রাবার বাগান। রামু বাইপাস থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার উত্তরে রামু রাবার বাগানের অবস্থান। আর কক্সবাজার জেলা থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামু রাবার বাগান।
রামু উপজেলার উঁচু-নিচু পাহাড়ি জমিতে গড়ে উঠেছে রামু রাবার বাগান। রাবার বাগানের ভেতরে রয়েছে একটি বিশ্রাম কক্ষ। এই কক্ষের চারদিকে বিশাল এলাকা জুড়ে উঁচু উঁচু রাবার গাছ। প্রায় সময় পর্যটকরা আসলে এই কক্ষে একটু ঝিরিয়ে নিতে পারেন। এবং প্রায় সময় বনভোজনে আসা পর্যটকের এই বিশ্রাম কক্ষ ব্যবহার করতে পারেন, তবে পূর্ব অনুমতি নিতে হয় কর্তৃপক্ষের।
চারদিক নিরব-নিস্তব্দ এবং সবুজ পরিবেশ চাইলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে রামু রাবার বাগান। বিশেষ করে নিরবতা এবং রাবার গাছের সাথে ধাক্কা খাওয়া শু শু বাতাসের গুন্জন সবচেয়ে উপভোগ্য এখানে। যদি ভাগ্য থাকে তাহলে এখানে দেখা পেতে পারেন বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর।
রামু রাবার বাগানের গহীনে হাতির একটি দলের কথা স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়। একসময় সে গহীনে সাধারণ মানুষের প্রবেশের কোন বিধি-নিষেধ না থাকলেও সম্প্রতি দেখা গেছে বিধি নিষেধের একটি সাইনবোর্ড। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশের রাবার বাগানের ভেতরের ইটের রাস্তাও বেশ আকর্ষণীয় এখানে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মানুষের ভিড় যাদের ভালো লাগে না তাদের নিশ্চয় সবুজ-নিরব পরিবেশ রামু রাবার বাগানে অসম্ভব রকমের ভালো লাগা কাজ করে। তাইতো অনেকে এখানে চলে আসেন।
রামু রাবার বাগানে গেলে আপনি এখানে একটা সমস্যার সম্মুখীন হবেন তা হলো রামু রাবার বাগানের আশে-পাশে কোন দোকানপাট নাই। জরুরী কোন পণ্য চাইলেও কিনতে পারবেন না। তাবে আশার কথা হলো রামু রাবার বাগান থেকে একটু সামনে মিঠাছড়ি রাস্তার মাথার ভাতের হোটেলগুলোর পরিবেশনা দারুণ।
রামু রাবার বাগান অফিস সূত্রে জানা যায়, পুরো রাবার বাগানজুড়ে রয়েছে শত শত কর্মী। এখানকার স্থানীয়রা দৈনিক ভিত্তিতে রাবার কষ সংগ্রহ করে রাবার কারখানায় দিয়ে আসে এবং কষ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। প্রায় এক হাজার দুইশত জন প্রতিদিন রামু রাবার বাগান থেকে রাবার কষ সংগ্রহ করে থাকেন।
রাবার বাগানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কক্সবাজার জেলা সরকারি ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬০-৬১ সালের দিকে সরকারি খাস বনভূমির উপর রাবার বাগানটি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে রাবার বাগানটির আয়তন ২,৬৮২ একর। পুরো এই এলাকাজুড়ে রাবার গাছ থাকলেও ১,১৩০ একর এলাকা থেকে লিকুইড বা কষ সংগ্রহ করা যায়।
রামু রাবার বাগান অফিসের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, রাবার বাগানে উৎপাদনক্ষম গাছ আছে প্রায় ৫৮ হাজারের বেশি। এসব গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি রাবার উৎপাদন হয়। যা দেশের বিশাল রাবার চাহিদার জোগান দেয়। দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয় রামু রাবার বাগানের রাবার।
বনশিল্পের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে রামু রাবার বাগান ছাড়াও চট্টগ্রামে ৭টি, সিলেটে ৪টি ও মধুপুরে ৫টি রাবার বাগান রয়েছে। রামু রাবার বাগানটি বর্তমানে স্বায়ত্বশাসিত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থা’র (BFIDC) অধীনে পরিচালিত রামু রাবার বাগান সরকারি উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কক্সবাজার জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। একদিকে যেমন পর্যটন খাতে উন্নতি ঘটবে তেমনি রামু উপজেলার অন্যান্য জায়গাগুলোও বেগ পেতে পারে নতুন মাত্রার। আশা করা যায়, বাংলাদেশে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত এই ব্যবস্থা নিবেন।
রামু রাবার বাগানের গহীনে এক রাত কাটানো সম্ভব হলে মনে হবে আরো বহু বছর বেঁচে থাকি। রামু রাবার বাগানের অফিসের উত্তর পাশের রাস্তা দিয়ে সোজা এক কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে রাত কাটান অনেকে। রাতে নানান বন্যপ্রাণীর শব্দ শোন যায় এখানে।
তবে ভীতু হলে রামু রাবার বাগানে রাত কাটানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বর্ষাকালে রামু রাবার বাগারে আপনি যেতে পারেন কিন্তু অবশ্যই দিনের বেলায়। রাত কাটাতে হবে অবশ্যই শীত মৌসুম উপযোগী। একদিন আর সাথে একরাত যদি রামু রাবার বাগানে কাটানো যায় তা কিরকম ব্যাপার তা ভাবা যায় না।