সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার একটি বৌদ্ধ মন্দিরে সন্ধান মিলেছে পুরানো তালপাতায় লেখা বৌদ্ধ ধর্মীয় পুঁথি। সম্প্রতি মন্দির পরিষ্কার কার্যক্রমে বার্মিজ ভাষায় লেখা এসব পুঁথির সন্ধান পান স্থানীয়রা। কাঠের বোর্ড দিয়ে একেকটা পুঁথি বাধানো আছে। উপজেলার ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহারে এসব তালপাতার পুঁথি পাওয়া যায়।
মন্দিরে সেবকের দায়িত্বে থাকা প্রণয় বড়ুয়া ও তনয় বড়ুয়া প্রথম এইসব পুঁথি দেখতে পান। প্রণয় বড়ুয়া প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, মন্দির পরিষ্কার করার সময় দুইটি কাঠের আলমারিতে শতাধিকের অধিক তালপাতার পুঁথি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বেশকিছু পুঁথি পোকায় কেঁটেছে। তবে অধিকাংশ এখনো ভালো আছে।
শ্রীকুলের বাসিন্দা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী লিটন বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে এসব অতি মূল্যবান সম্পদ। যারা ভাষা নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য এসব যে কতটা মূল্যবান তা বলে বুঝানো যাবেনা। প্রাথমিকভাবে বার্মিজ ভাষায় এসব পুঁথির লেখা সনাক্ত করা গেছে।
উল্লেখ্য যে, শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহারটি প্রায় শত বছরের পুরানো। স্থানীয় একাধিক বয়োবৃদ্ধ পূজারী জানান, আগে মায়ানমার থেকে অনেক ভিক্ষু এই বিহারে আসতো। হয়তো সেসময়ে মায়ানমার থেকে এসব তালপাতার পান্ডুলিপি আনা হয়েছিলো। বিহারের অধ্যক্ষ শতবর্ষী উ সুকাচারা মহাথেরো এসব পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেছিলেন।
তরুণ ইতিহাস বিশ্লেষক এডভোকেট শিরুপন বড়ুয়ার কাছে তালপাতার এসব পুঁথি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, যেহেতু তালপাতার লেখাগুলো বর্মিভাষা, তাই আমরা ধারণা করতে পারি এগুলো আরাকান হতে এদেশে বৌদ্ধ পন্ডিতরা এনেছেন। ১৭৮৫ সালের পরবর্তী সময়ে অনেক রাখাইন জনগোষ্ঠী শরনার্থী হিসেবে টেকনাফ রামু হারবাং এলাকায় আশ্রয় নেয়। এরা ছিল মূলত বৌদ্ধ। তারা এখানে বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করে বৌদ্ধ প্যাগোডা বা জাদী। সাথে বেশ কিছু বৌদ্ধ বিহার, যার স্ট্রাকচার ছিল মূলত কাঠের। তখন এসব তালপাতার বৌদ্ধ সাহিত্য গুলো রামুতে প্রবেশ করে। তালপাতার পুঁথির ইতিহাস বহুপ্রাচীন। নালন্দা, এবং তক্ষশিলায় এরকম হাজার হাজার তালপাতার পুঁথি ছিল।
২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার আগেও একাধিক বৌদ্ধ মন্দিরে হুবুহু একইরকম তালপাতার পুঁথি ছিলো বলে জানা গেছে। তবে একাধিক বৌদ্ধ মন্দির আগুনে পুড়ে যাওয়ায় এসব মূল্যবান পুঁথি পুড়ে গিয়েছিলো।