ঢাকায় যে গণ-গ্রন্থাগারগুলোতে পড়া যায়

অলাত এহ্সান

ফেব্রুয়ারি এলেই মনে পড়ে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা, বইয়ের কথা। সৈয়দ মুজতবা আলী বলেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’বইপ্রেমিদের এ নিয়ে আবেগেরও শেষ নেই। একটি একটি বই জমে, ভরে ওঠে সেলফ। এরকম অনেকগুলো  বইভর্তি সেলফ নিয়ে গড়ে ওঠে একটি পাঠাগার। মননের পরিতৃপ্তি আর উৎকর্ষতায় জুড়ি মেলা ভার। প্রমথ চৌধুরী ‘লাইব্রেরিকে স্কুল কলেজের ওপরে স্থান’ দেন। আর মোতাহার হোসেন চৌধুরী লাইব্রেরিকে চিহ্নিত করেন, ‘জাতির সভ্যতা ও উন্নতির মাপকাঠি’হিসেবে।

শুধুমাত্র লাইব্রেরির সংস্পর্শে থেকেই আরজ আলী মাতুব্বর হয়েছেন একজন স্বশিক্ষিত দার্শনিক।

মানসিক বা চিন্তার সমৃদ্ধি অর্জনে লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই। তবে ঢাকায় জনসংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট লাইব্রেরি নেই। এখনো যে’কটি লাইব্রেরি প্রধানত পাঠকদের চাহিদা পূরণ করে চলছে সে সম্পর্কেও অনেকের ধারণা নেই। যে কারণে পাঠের আগ্রহ থাকলেও অনেক সময় তা পড়া হয়ে ওঠে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এক সময় ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হত। বইয়ের সংখ্যায় অনেক বড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি ও বুয়েটের লাইব্রেরি। তবে এসব পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। যেসব লাইব্রেরি সবার জন্য উন্মুক্ত, সেরকম কয়েকটি লাইব্রেরির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায় নিয়েই এই রচনা।

১. বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরে জাতীয় গ্রন্থাগার গড়ে ওঠেছে ১৯৭২ সালে। এখানে বইয়ের সংখ্যা ৫ লাখের অধিক। নিত্য ব্যবহারযোগ্য প্রায় ২ লাখ। ৫৫টি বাংলা দৈনিক, ১৮০টি সাময়িকী এবং ৬টি ইংরেজি দৈনিক ও ৩০টি সাময়িকী পাঠকের জন্য পরিবেশিত হয়। সব ধরণের বই ছাড়াও আছে পুরনো দুষ্প্রাপ্য কিছু বই। ১৯৬১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট ২৫১ শিরোনামের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র সংরক্ষিত আছে। এছাড়া ১৯৯২-২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩০০০ কপি ম্যাপ এবং ১৮৭৫-১৯২৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্রের ৫৯টি মাইক্রোফিল্ম রোল জাতীয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে। এটি সবার জন্য খোলা থাকে রোবার থেকে বৃহস্পতিবার, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা।

২. সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার

শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর সংলগ্ন পাবলিক লাইব্রেরিই হচ্ছে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো পরিচালিত হয়। বর্তমানে এ গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজারের অধিক। কক্ষভেদে পাঠ ব্যবস্থায় সাধারণ পাঠকক্ষে সাহিত্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও বিভিন্ন বিভাগের পাঠ্যপুস্তক রয়েছে।

গবেষণার জন্য রেফারেন্স কক্ষে রয়েছে রেফারেন্সমূলক বই। আলাদাভাবে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে শিশু-কিশোর পাঠকক্ষ। এতে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন ম্যাগাজিনসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক বই রয়েছে। লাইব্রেরির পাশেই রয়েছে একটি আধুনিক ক্যান্টিন। সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

৩. জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র

মহানগর পাঠাগারখ্যাত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গুলিস্তান বাণিজ্যিক এলাকার ৫/সি বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থিত। এর দু’টি সেকশনের মধ্যে পুস্তক শাখায় সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন বই ও রেফারেন্স বই রয়েছে এবং পেপার শাখায় দৈনিক পত্র-পত্রিকা ছাড়াও পাঠকের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন টাইম, নিউজ উইক, নিউইয়র্ক টাইমস ও ইকোনমিস্টের কপি সরবরাহ করা হয়। সর্বমোট ১২ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ এই লাইব্রেরিটি পরিচালনা করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।

৪. বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

“আলোকিত মানুষ চাই”- স্লোগান নিয়েই তিন দশক আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি রাজধানীর বাংলামোটর (১৪, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ) এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ৫ লাখ বইয়ে সমৃদ্ধ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠাগার মূলত শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বই পাঠকদের জন্য পরিবেশন করে থাকে।

এই কেন্দ্রের আরেকটি শাখা হলো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। বইভর্তি ২৮টি বাস (লাইব্রেরি) ঢাকাসহ ৪২টি  জেলার পাঠকদের জন্য বই সরবরাহ করে থাকে। এটি বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। একজন সদস্য একসঙ্গে দুটি বই ধার নিতে পারেন সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের জন্য। লাইব্রেরির সঙ্গে ক্যান্টিনসহ অন্যান্য সুবিধা আছে।

৫. এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলের পাশে নিমতলীতে অবস্থিত এ লাইব্রেরিতে রয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার বইয়ের এক বিশাল ভান্ডার। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এ লাইব্রেরিটি। মূলত গবেষক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তথ্যের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করছে। বেশকিছু দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বইসহ এ দেশের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতিসহ প্রায় সব বিষয়ের বইয়ের বিশাল ভান্ডার এ লাইব্রেরি।

একসঙ্গে শত লোক পড়ার উপযোগি এ লাইব্রেরিতে সব কটি জাতীয় দৈনিক, মাসিক মিলিয়ে ৫০টি জার্নাল রাখা হয়। এখানে সদস্য হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির স্বরচিত কমপক্ষে দুটি প্রকাশনা থাকতে হয়। বাংলাপিডিয়াসহ রয়েছে বেশ কিছু নিজস্ব প্রকাশনা। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই খোলা থাকে।

৬. বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) লাইব্রেরি

সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বইয়ে সমৃদ্ধ একটি বিশেষ ধরনের লাইব্রেরি পিআইবি লাইব্রেরি। সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের তথ্য চাহিদা পূরণ, পাঠস্পৃহা বাড়ানো ও মননশীলতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

লাইব্রেরির ‘বই শাখা’য় রয়েছে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বইসহ অন্যান্য বিষয়ে ১৩ হাজারের অধিক বই। বইগুলোর দ্বিবার্ষিক কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিবলিওগ্রাফিক ডাটাবেজ করা আছে। এবং ‘নিউজ পেপার’ আর্কাইভসে ১৩টি ম্যাগাজিনসহ দেশি-বিদেশি ২৭টি দৈনিক পত্রিকা সংরক্ষণ হয়।

এই শাখায় ২০০০ সাল থেকে দেশের দুটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য ও সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট জার্নালের প্রবন্ধের কম্পিউটারাইজড ডাটাবেজ তৈরি করা রয়েছে। তবে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ খবর ও প্রবন্ধের ওপর বিষয়ভিত্তিক ক্লিপিং সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক ফাইলের সংখ্যা ২৬৫। এ লাইব্রেরি সব ধরনের পাঠকের জন্য উন্মুক্ত।

৭. ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি অবস্থিত। এখানে আছে ২৫ হাজারের অধিক বই, ১৫ হাজারের মতো সিডি-ডিভিডি, সাইবার জোন। শিশুদের উপযোগী বই, ভিডিও গেমস সুবিধা, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার্থীদের বই, আইইএলটিএস উপকরণ, বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের সুবিধা পাওয়া যায়।

শিক্ষার্থী পাঠকেরা লাইব্রেরির চমৎকার পরিবেশে বসে পড়া, ৩০ মিনিট ইন্টারনেট ব্রাউজ এবং সেলফ অ্যাকসেস সেন্টারে IELTS -এর প্রস্তুতির জন্য সিডি ক্যাসেট শুনতে পারেন। এছাড়া একজন মেম্বার একসঙ্গে চারটি বই, তিনটি জার্নাল ও দুটি সিডি বা ডিভিডি তিন সপ্তাহের জন্য ধার নিতে পারেন।

স্টুডেন্ট মেম্বারশিপ ছাড়াও রয়েছে জেনারেল মেম্বারশিপ, ফ্যামিলি মেম্বারশিপ, ইয়াং মেম্বারশিপ, ডিভিডি মেম্বারশিপ ও করপোরেট মেম্বারশিপ। শনি-বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

৮. আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ লাইব্রেরি

সংগীত, সিনেমা, ইন্টারনেট এবং প্রায় সাত হাজার বই নিয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ লাইব্রেরি ২৬, মিরপুর রোড-এ অবস্থিত। এখানে বেশ সমৃদ্ধ চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি ও আর্কিটেকচারের সংগ্রহ আছে। পড়াসহ মাল্টিমিডিয়া সুবিধা পাওয়া যাবে। এজন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ ও বার্ষিক ফি প্রদান করে সদস্য হতে হবে।

একজন সদস্য একসঙ্গে চারটি বই, একটি ম্যাগাজিন ও একটি জার্নাল দুই সপ্তাহের জন্য ধার নিতে পারেন। এ লাইব্রেরি খোলা থাকে সোম-বৃহস্পতিবার চারটা থেকে নয়টা এবং শুক্র ও শনিবার যথাক্রমে নয়টা থেকে দুপুর ১২টা এবং পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত।

৯. গ্যেটে ইনস্টিটিউট লাইব্রেরি

বই, সিডি, ডিভিডি ও মাল্টিমিডিয়াসহ পাঁচ হাজারের বেশি সামগ্রী  নিয়ে গ্যেটে ইনস্টিটিউট লাইব্রেরি । বই পড়া ও সিনেমা দেখার পাশাপাশি এখানে ফটোকপি ও কম্পিউটার প্রিন্টের সুবিধা আছে। এমনিতে সবার জন্য উন্মুক্ত। শুধুমাত্র লাইব্রেরির সদস্যরা দুটি বই ও দুটি ম্যাগাজিন ধার নিতে পারবেন।

ধানমন্ডির ৯/১০ অবস্থিত এই লাইব্রেরি খোলা থাকবে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে চারটা, রোববার পাঁচটা থেকে আটটা, সোমবার ১২টা থেকে ছয়টা, মঙ্গল ও বুধবার ১২টা থেকে আটটা পর্যন্ত। বৃহস্পতি, শুক্র ও সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকবে।

১০. রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র লাইব্রেরি

ধানমন্ডি-৭ এ অবস্থিত রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র লাইব্রেরি। অত্যান্ত জনপ্রিয় প্রগতি প্রকাশন ছাড়াও রাশিয়ান ও বাংলা, ইংরেজি মিলে সংখ্যা ১২ হাজার বইয়ের বিশাল সম্ভার। অধিকাংশ রাশিয়ান, বাংলা, ইংরেজি পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।

পাঠকক্ষে পড়ার সুবিধা ছাড়াও সিনেমা দেখা যায়। এজন্য এখানে সদস্য হতে হয়। তবে এখানকার ভাষা শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারবেন। লাইব্রেরি খোলা থাকে রবি ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত। শুক্র, শনিবার ও রাশিয়ার নিজস্ব ছুটির দিনে বন্ধ।

১১. রামমোহন রায় লাইব্রেরি ও পাঠগৃহ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কবি সুফিয়া কামাল, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুল ওদুদ, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও কবি শামসুর রাহমানসহ আরো অনেক খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীর স্মৃতি বিজড়িত রাজা রামমোহন লাইব্রেরি।

ঢাকার অন্যতম পুরনো এই লাইব্রেরি ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরান ঢাকার সদরঘাটের পাটুয়াটুলী সড়কে ব্রাহ্মসমাজের একটি ভবনের দোতলায়। পরবর্তী সময়ে অনেক শিক্ষাব্রতী ব্যক্তির সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় এটি সমৃদ্ধ হয়। এখানে পাঁচ হাজারের বেশি দুষ্প্রাপ্য বই ছিল। এছাড়া পাঠগৃহ ভরপুর ছিল দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ধর্মীয় ও দার্শনিকদের বইপুস্তকে।

কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের লুটপাটের পর দুষ্প্রাপ্য সেসব পুস্তক আর সংগ্রহ করা যায়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক গ্রন্থ। ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ২০০৯ একে ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। পরে একে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ঘোষণা করে সংরক্ষণের উদ্যোগের ফলে কংক্রিটে পরিণত হয়েছে এ ভবনটি। শুধু মরে গেছে এর প্রাণের লাইব্রেরিটি।

১২. মওলা বখশ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট

“দাও আলো, দাও জীবন”- স্লোগানে প্রতিষ্ঠিত মওলা বখশ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ট্রাস্টি কার্যক্রম ছাড়াও এখানে রয়েছে ঢাকার অন্যতম ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাঠাগার, প্রদর্শনী, গবেষণা, প্রকাশনা ও চর্চা কেন্দ্র। রয়েছে ৪০ আসনবিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটির ৬ হাজার ৫০০ বইয়ের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ বই-ই ঢাকা বিষয়ক। ঢাকা বিষয়ক যেকোনো গবেষণার কাজে গবেষক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদদের জন্য ‘ঢাকা কেন্দ্র’র দ্বার সব সময় উন্মুক্ত।

এখানে রয়েছে ৩০ দশকের বিয়ের পোশাক, ৪০ দশকের বিদ্যুৎচালিত কলের গান, পাকিস্তান আমলের হুক্কা, রেকর্ড, টেলিফোন, চাল গুঁড়া করার কাহেল, ট্রাঙ্ক, দেয়াল ঘড়ি, ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্রসহ অনেক কিছু। ঢাকা কেন্দ্রের উত্তর পাশে রয়েছে ১০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম বিলকিস বানু স্মৃতি মিলনায়তন।

এখানে ঢাকা বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ফুটেজ প্রদর্শনী করা হয়। এছাড়াও ঢাকা কেন্দ্র থেকে তিন মাস পরপর ঢাকাবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ত্রৈমাসিক ঢাকা’ প্রকাশিত হয়। এখানে আরো রয়েছে বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের নার্সারি। ১৯৮৮ সালের ১৫ জানুয়ারি সমাজসেবামূলক এই ট্রাস্টটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের ২৪, মৌহিনী মোহন দাস লেনে এটি অবস্থিত।

১৩. ঢাকায় আরও লাইব্রেরি

ঢাকার ৯৩টি ওয়ার্ডে ৬৮টিতে কোনো পাঠাগার নেই। একটি ওয়ার্ডে দু’টিসহ ২২টি ওয়ার্ডে যে ২৩টি পাঠাগার রয়েছে তার অধিকাংশই বন্ধ থাকে। এসব পাঠাগারে ন্যূনতম পাঠের পরিবেশ নেই। পুরোপুরি উন্মুক্ত না হলেও অত্যান্ত সমৃদ্ধ লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে সায়েন্স ল্যাবরেটরি-এ অবস্থিত বিসিএস আই আর লাইব্রেরিতে ১৫ হাজার বই ও ২৫ হাজার জার্নাল আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী মোড়ে অবস্থিত ব্যানসেইল লাইব্রেরিতে ২৩ হাজার বই ও ১০ হাজার জার্নাল সংরক্ষিত আছে। ধানমন্ডির মিপুর রোড়ের ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ লাইব্রেরি’-এ বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য  ৫০ হাজার বই ও প্রচুর জার্নাল রয়েছে। আগারগাঁও, শের-ই-বাংলা নগরে বিআইডিএম লাইব্রেরিতে শুধু এর সদস্য, চাকরিজীবি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানের উপর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বই আছে।

লেখক: অলাত এহ্সান, লেখক ও সাংবাদিক।
alatehasan.m@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *